আজ ১৪ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

গৌরবময় বৈচিত্র্যে স্বরণীয় বিজয়ীবীর চট্টলবীর মহিউদ্দিন চৌধুরী।

চট্টগ্রাম রিপোর্টার : মোহাম্মদ মাসুদ

বিজয় মাসে জন্ম-মৃত্যু,স্মৃতিময় শূন্যতায় অপূরনীয় আজও জনতার হৃদপিণ্ডে ঢেউ।
১ডিসেম্বর,৭৮তম জন্মদিবস।১৫ডিসেম্বর চতুর্থ মৃত্যু বার্ষিকী।

এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী।
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রবীন খ‍্যাতনামা রাজনতিকবিদ বিজয়ীদের বিখ্যাত আরেক নাম। চট্টলমাটি আর মহিউদ্দিন যেন অভিন্ন এক শব্দ শুধু নয় এক আত্মায় এক সুরে গাঁথা।
দেশ বরেণ‍্য স্বরণীয় এই নেতা শুধু দলীয় রাজনীতিতে নয়,সর্বদল মহলে,তৃণমূলে,সর্বস্তরের মানুষের কাছে ছিলেন ভালোবাসা,জ‍্যতিময়,দেশপ্রেমিক নেতা হিসাবে।যার সৌভাগ্য সবার হয়ে উঠে না।

স্থানেকালে হয়েছেন সর্বকালের কালের স্বরণীয় চট্টলবীর মহিউদ্দিন।বাংলা বাঙালির ইতিহাসে চীরস্মরণীয় হয়ে থাকবে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে। তিনি আজও বেঁচে আছে জনরবে নিজগুন কর্ম ইতিহাসে।

১৯৪৪ইংএ ১ডিসেম্বরে জন্ম‌।মাতা বেদৌরা বেগম,পিতা আলহাজ্ব হোসেন আহম্মদ চৌধুরী।রাউজান থানাধীন গহিরা গ্রামে তার উত্তসুরী।
পূর্ব-নাসিরাবাদ,২নংগেইট মেয়রগলি নীজবাড়ী।

পড়াশোনা করেন মাইজদি জেলা স্কুল,কাজেম আলী ইংলিশ স্কুল,আর প্রবর্তক সংঘে। বাবার নির্দেশে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংএ ভর্তি হলেও সেখানে পাঠ না চুকিয়েই ভর্তি হন চট্টগ্রাম কলেজ,কমার্স কলেজ,পরে সিটি কলেজেই তার রাজনৈতিক হাতেগড়ি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় থাকায় ধীরে ধীরে হয়ে উঠেন গনমানুষের প্রতিবাদী বজ্রকন্ঠস্বর অবিসংবাদিত গননেতা হিসাবে।
একলাফে নয়,ধৈর্য্য-সয‍্য,সহনশীল,মানুষের আস্তা ভালোবাসায় কালেক্রমে বিন্দুবিন্দু জলে হয়ে উঠেছেন চট্টলবীর,মুকুটহীন সম্রাট বিদ্রোহী চট্টল অভিবাবকে পরিণত হন।

৬৬তেও তরুণ রাজনৈতিক হিসেবে ঝড় তুলতে থাকেন।বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক মাঠের জোয়ার সৃষ্টিকারী এই সহযোদ্ধা।

ষাটের দশকের মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।
৭১এ অসংখ্যবার পাকবাহিনীর কাছে গ্রেফতারে দীর্ঘ চারমাস অমানষিক নির্যাতন,মৃত্যুর খবরে ভারতে শহীদ মহিউদ্দিন ক‍্যম্প খোলা।
বাবাও দিয়েছিলেন ছেলের নামে ফাতেহা।এরই মাঝে ঘটে অবিশ্বাস্য উদ্ভুদ বিষ্ময়কর শ্বারুদ্ধকর ঘটনা। তিনি মানসিক রোগীর নাটক করে চট্টগ্রাম কারাগার থেকে পালিয়ে ভারতে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ শেষে।
সক্রিয় হন ভারত-বাংলা যৌথবাহিনীর মাউন্টেন ডিভিশনের অধীনে।
৭১স্বাধীনতার সম্মূখ যুদ্ধা, গেরিলা কমান্ডার হিসাবে।

তেমনি রাজনৈতিক জীবনেও নিপীড়ন,নির্যাতন,জীবন বিপন্নের মুখোমুখি হয়েও অফুরান প্রাণশক্তি,বীরত্বপূর্ণ বিজয় সফলতা দেশবিদেশে অন‍্যন‍্য প্রতিক দেশপ্রেমিক ইতিহাসেও আজ ঐতিহাসিক‍।

৭১এ জয়বাংলা বাহিনী,৭৫এর বঙ্গবন্ধু হত্যা প্রতিশোধে মুজিববাহিনী গঠন,স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন,শ্রমিক আন্দোলন, বন্দর রক্ষা,অসহযোগ আন্দোলনসহ চট্টলার মাটি ও মানুষের স্বার্থ রক্ষায় ছিলেন অগ্রগন‍্য সবার আগে অদম্য দুর্বার গতিতে।

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছিলেন মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি। ৭৩এ শ্রমিক হত্যা বিচারের দাবীতে স্বাধীনদেশে প্রথম হরতালের নেতৃত্বে থাকায় বঙ্গবন্ধু তলবে স্বয়ংসাক্ষতে সুবিচারের প্রতিশ্রুতি দেন।

কৈশলে বঙ্গবন্ধুর লাশ টুঙ্গিপাড়ায় দাফন।
ছদ্মবেশে বঙ্গবন্ধুর মাজারে গিয়ে যেখানে ভালভাবে বাঁশের সীমাও ছিল না সেখানে পাকা ওয়াল নির্মাণ করে,চট্টগ্রাম থেকে নির্মাণ শ্রমিক ও শ্বেতপাথরে বঙ্গবন্ধুর নামীয় ফলক স্থাপন,ফরিদপুর থেকে নির্মাণ ইট সংগ্রহ করেন।
মৃত্যুদিবসেও ২৮বছর ধরে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানির আয়োজন করেন।
যা আজ জাতীয় ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।

।তৎকালীন ক্ষমতাসিন মন্ত্রী মীর নাছিরকে প্রতিপক্ষ হিসাবে ভোটে পরাজিত করা। ৯৫এ গ্রেফতারে সারা চট্টগ্রামের রাজপথ তীব্র আন্দোলনে অচলের খবর ঝড়ের গতিতে ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশের মানুষের মুখেমুখে শীর্ষস্থানীয় সকল প্রত্রিকার শিরোনামেও।

সেদিন থেকেই শুধু চট্টগ্রাম নয়, সারা বাংলাদেশে মানুষের কাছে কীর্তিমান গনমানুষের সফল নেতা হিসেবেও পরিচিত।১৯৯৪ থেকে টানা ১৭বছর সিটি মেয়র থাকা কালিন সিটিকে গভর্নমেন্ট আদলে গড়ে তুলে গভর্নমেন্ট রূপকার হিসেবেও পরিচিত।

চসিকের আওতায় স্কুল,কলেজ স্থাপন।চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা। সুইপার শ্রেণিকে সেবকের মর্যাদা,মানুষেরঅধিকার,সংস্কৃতি,ধর্ম,কৃষ্ঠিকালচার গভীর শৈল্পিকতায় অবলোকন করতেন,মহান রাজনৈতিক এই কারিগর।সবাইকে নিয়েই নিজের অবস্থান তৈরি করতেন।

।বহু জ্ঞানী গুনীজনরা যা বলার সাহস পেত না তিনি তা বাস্তবে করে দেখাতেন।এবং তাঁদের মন জয় করে আস্থা,ভালোবাসায় পছন্দের প্রিয় জননেতায় পরিণত হন।

চট্টগ্রামের প্রবেশমুখে নির্মিত আধুনিক শৈলির সিটি গেইট।শিক্ষা,স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নেও ছিল অপরিসীম ভুমিকা।উচ্ছেদ হওয়া হকার সমিতির সাধারণ সম্পাদক থেকে পাঁচটি সংগঠন নিয়ে চট্টগ্রাম প্রাণকেন্দ্রে জহুর হকার্স মার্কেট প্রতিষ্ঠা করেন।

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছিলেন মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি।কথা নয় কাজেই পরিচয়।স্বপ্নবান ফেরিওয়ালা,
রাজনৈতিকশিল্পী,কারিগর,পরাজিত হয়েও ভেঙ্গে পড়েননি কখনও।বরং আমীয় বাণীতে তিনি বলতেন।
আমি একজন রাজনৈতিবিদ রাজনৈতিতে জয় পরাজয় থাকবেই।জয়ী হওয়া বড় কথা নয়,সাধারণ মানুষের ভালবাসা,পছন্দেই সবচেয়ে বড় বিজয়।

রাজনৈতিকে রাজপথ কাঁপনো ক্ষমতাধর শীর্ষ সফল নেতা থাকা সত্ত্বেও।
দলীয় নির্দেশনা মেনে নেওয়া,নিজ স্বার্থ-ক্ষমতা ক্ষুন্ন করে নীজ সমর্থক অন্ধভক্ত বিদ্রোহী নেতাকর্মীদের শান্তনা দেওয়া,অনুভূতি প্রেরণা যোগানো,চিন্তা-চেতনার মহৎ দৃষ্টিভঙ্গি,উদার মনের মানুষ হিসাবেই সকলের কাছে পরিচিত।

।ধর্মকর্মেও ছিল গভীর শ্রদ্ধা-ভক্তি।তিনি বলতেন-
মানুষ ধর্মের জন্য নয়,ধর্ম মানুষের জন্য,সবার উপরে মানুষ সত্য।

বিজয় শব্দটি তার প্রিয়।তাই মুক্তি যুদ্ধের বিজয় মেলা,বিজয় নামে স্মারক ভাষ্কর্য,বিজয় নামে স্তম্ব,বিজয় টিভি,বিজয় ষোলআনা দৈনিক প্রত্রিকা প্রবর্তক ছিলেন।

আর যে বিজয়ের মাসে পৃথিবীর আলো দেখেছিলেন সেই বিজয়ের মাসেই চীরদিনের জন্য ঘুমিয়ে পড়েন।২০১৭ইংএ ১৫ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার মহানের মৃত্যুদিবস।
৭৪বছরে বর্ণাঢ্য জীবনের অবসানে বিদায়ী নেতাকে শ্রদ্ধা জানান আজও সর্বসাধারণে।
যার মৃত্যুশোকে ভেসেছিল সারা চট্টগ্রাম।স্বরণকালের বড় জানাযায় ঐতিহাসিক লালদিঘির অবস্থানের মাধ্যমে। লাখো জনস্রোতে চীরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন বাবার কবরের পাশে চশমাহিল কবরস্থানে।৩য় মৃত‍্যু দিবস স্মৃতিতে জানাই গভীর শ্রদ্ধা। তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। পরপারেও ভাল থাকুন স্বপ্নবান,চট্টলবীর,চট্টলপ্রিয়, প্রিয়নেতা মহিউদ্দিন।

পূর্ণ-কর্মময়ে মানুষ জনরবে বেচে থাকে চীরদিন।এটা সত্য এবং এটাই বাস্তব। মানুষ মাত্রই মৃত্যুশীল।এটাই জাগতিক চীরন্তন সত্য কথা। দুই দিনের দুনিয়ায় কেহ চীরস্থায়ী নয়।নিঃশ্বাসের নেই বিশ্বাস। দুনিয়ার কাজের সিরিয়াল শৃঙ্খলা থাকলেও মৃত্যুর ডাকের নেই সিরিয়াল কিংবা শ্রেণিবিন‍্যাস।সবাইকেই অদৃশ্য ডাকে দুনিয়া ছাড়তেই হয়।

তারপরেও আবার কেন? আমরাই আবার বলি? মানুষ তো মরে না? মরনেও হয় স্মৃতি।মরণের পরেও কর্মগুনে চীরস্বরণীয় হয়ে থাকে সবার মাঝে। দুনিয়ার জীবনের পরিপূর্ণ কর্ম আর কৃতিত্বে।

ইহকাল ও পরকালে আল্লাহপাক যেন সকলকেই সুমহান সুখ,শান্তি ও কামিয়াবী হওয়ার সুযোগ দান করুন।আমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

     এই বিভাগের আরও খবর